উৎসে কর কর্তন, সংগ্রহ, প্রদানে ব্যর্থতার ফলাফল কি হতে পারে? 

উৎসে কর কর্তন, সংগ্রহ, প্রদানে ব্যর্থতার ফলাফল কি হতে পারে? 

একটি দেশের করব্যবস্থায় বিশেষ বিশেষ খাত থেকে উৎসে কর সংগ্রহের নীতি বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে, বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। উৎসে কর্তিত করের গুরুত্ব অনুধাবন করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর আয়কর আইন ২০২৩ এর ধারা ১৪৩ অনুযায়ী উৎসে কর কর্তন, সংগ্রহ, প্রদানে ব্যর্থতার উপর বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে। 

উৎসে কর কর্তন, সংগ্রহ, প্রদানে ব্যর্থতার ফলাফল 

২০২৩ সালের আয়কর আইনের ধারা ১৪৩ অনুযায়ী উৎসে কর কর্তন, সংগ্রহ, প্রদানে ব্যর্থতার ক্ষেত্রে এনবিআর নিম্নোক্ত ফলাফল নির্ধারণ করে দিয়েছে;

১। যেক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তি-

(ক) উৎসে কর কর্তন বা সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হন, অথবা

(খ) অপেক্ষাকৃত কম হারে বা পরিমাণে কর কর্তন বা সংগ্রহ করেন; বা

(গ) উৎসে কর কর্তন বা সংগ্রহ করার পর কোনো ব্যক্তি তা যদি সরকারের অনুকূলে জমা করতে ব্যর্থ হন অথবা যে পরিমাণ কর কর্তন বা সংগ্রহ করে তার চেয়ে কম পরিমাণ অর্থ সরকারের অনুকূলে জমা প্রদান করেন; বা

(ঘ) অন্য কোনো প্রকার দায়িত্ব পরিপালনে ব্যর্থ হন,

সেক্ষেত্রে এরূপ ব্যক্তি খেলাপি করদাতা হিসাবে গণ্য হবেন। 

২। উপ-ধারা (১) অনুযায়ী খেলাপি করদাতা হিসেবে গণ্য ব্যক্তি, এই আইনের অধীন অন্য যেসব পরিণতির জন্য দায়ী হতে পারেন তা ক্ষুণ্ন না করে নিম্নবর্ণিত অর্থ পরিশোধের জন্য দায়ী থাকবেন, যথা:-

(ক) যে পরিমাণ অর্থ কর্তন বা সংগ্রহ করা হয় নি;

(খ) যে পরিমাণ অর্থ কর্তন বা সংগ্রহ করা আবশ্যক এবং বাস্তবিক যে পরিমাণ কর কর্তন বা সংগ্রহ করা হয়েছে এই দুইয়ের পার্থক্যের সমপরিমাণ অর্থ; বা

(গ) কর কর্তন বা সংগ্রহ করার পর যে পরিমাণ অর্থ সরকারের অনুকূলে জমা করা হয় নি তার সমপরিমাণ অর্থ; এবং

(ঘ) অন্য কোনো বিধান পরিপালনের ব্যর্থতায় অনধিক ১০ (দশ) লক্ষ টাকা।

৩। উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত পরিমাণের অর্থ পরিশোধ ছাড়াও, উপ-ধারা (১) অনুযায়ী খেলাপি করদাতা হিসাবে গণ্য ব্যক্তি উপ-ধারা (২) এর দফা (ক), (খ) এবং (গ) এ উল্লিখিত পরিমাণের উপর নিম্নবর্ণিত সারণীতে প্রদত্ত অতিরিক্ত অর্থ গণনার ভিত্তি অঙ্কের উপর প্রতিমাসে ২% হারে অতিরিক্ত পরিমাণ অর্থ পরিশোধের জন্য দায়ী হবেন, যথা:-

সারণী

ক্রমিক নং

ব্যর্থতার ধরণ

অতিরিক্ত অর্থ পরিগণনার ভিত্তি

১।

এই অংশের বিধানাবলি অনুসারে কর কর্তন বা সংগ্রহের ব্যর্থতা

যে পরিমাণ উৎসে কর কর্তন বা সংগ্রহ করা হয়নি।

২।

কমহারে বা কম পরিমাণে কর কর্তন বা সংগ্রহ

যেই পরিমাণ উৎসে কর কম কর্তন বা সংগ্রহ করা হইয়াছে।

৩।

কর্তন বা সংগ্রহের পর উহা সরকারি কোষাগারে জমা না দেওয়া বা পরিমাণে কম জমা দেওয়া

উৎসে কর কর্তনের পর যেই পরিমাণ অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয় নাই।

 

৪। উপ-ধারা (৩) এর অধীন অতিরিক্ত অর্থ পরিগণনার মেয়াদ উৎসে কর কর্তন বা সংগ্রহের নির্ধারিত তারিখ হতে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার তারিখ পর্যন্ত হবে:

তবে শর্ত থাকে যে, এই মেয়াদ ২৪ মাসের বেশি হবে না।

৫। উপকর কমিশনার উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত ব্যক্তিকে শুনানির যুক্তিসংগত সুযোগ প্রদান করে তার নিকট হতে উপ-ধারা (২) এর অধীন পরিশোধযোগ্য অর্থসহ উপ-ধারা (৩) এ উল্লিখিত অতিরিক্ত পরিমাণ অর্থ আদায়ের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

৬। যেক্ষেত্রে সরকার, সরকারি প্রতিষ্ঠান, কর্তৃপক্ষ, প্রজেক্ট, প্রোগ্রাম, সংস্থা, ইউনিট বা সরকারের আর্থিক বা পরিচালনগত সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এরূপ কোনো কর্মকাণ্ডে উৎসে কর কর্তন বা সংগ্রহের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত, সেক্ষেত্রে-

(ক) অর্থ পরিশোধের অনুমোদন বা অনুমতির জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাভাবিক ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণ; অথবা

(খ) ছাড়পত্র, রেজিস্ট্রেশন, লাইসেন্স, পারমিট প্রদান, অনুমোদন বা অনুমতি প্রদানের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাভাবিক ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণ,

কর, জরিমানা ও অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধের জন্য যৌথভাবে ও পৃথকভাবে দায়ী হবেন।

৭। যেক্ষেত্রে সরকার, সরকারি প্রতিষ্ঠান, কর্তৃপক্ষ, প্রজেক্ট, প্রোগ্রাম, সংস্থা, ইউনিট বা সরকারের আর্থিক বা পরিচালনগত সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এরূপ কোনো কর্মকাণ্ড ব্যতীত অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান উৎসে কর কর্তন বা সংগ্রহের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত, সেক্ষেত্রে-

(ক) ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নিজে, এবং

(খ) অর্থ পরিশোধের অনুমোদন বা অনুমতি প্রদানের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাভাবিক ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণ-

এই ধারার অধীন কর, জরিমানা ও অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধের জন্য যৌথভাবে ও পৃথকভাবে দায়ী হবেন।

৮। যে ব্যক্তির নিকট হতে কর সংগ্রহযোগ্য বা কর্তনযোগ্য, তিনি ইতোমধ্যে উপ-ধারা (২) ও (৩) এ উল্লিখিত সকল প্রকারের অর্থ সম্পূর্ণভাবে পরিশোধ করে থাকলে, উপ-ধারা (২) ও (৩) এ উল্লিখিত অর্থ আদায়ের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে না।       

   

উপসংহার 

এনবিআর উৎসে কর কর্তনে, সংগ্রহে, এবং প্রদানে ব্যর্থতার কারণে শাস্তির বিধান করেছে। অর্থাৎ উৎসে কর্তিত কর যথাযথভাবে সরকারি কোষাগারে জমাদানে ব্যর্থ হলে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে নির্দিষ্ট শাস্তির মুখোমুখী হতে হবে। এজন্য কর পরামর্শকগণ যথাসময়ে যথাযথভাবে উৎসে কর্তিত কর সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার পরামর্শ প্রদান করে থাকেন। উৎসে কর্তিত কর সম্পর্কে আরও তথ্য জানতে বিডিট্যাক্সেশনের সাথে থাকুন। 

 

Share this Post

Comments (0)

Leave a comment

BD Taxation
Visitor Counter
Today's Hits 280
Yesterday's Hits 14564
Total Hits 958637